ধর্ষকের পক্ষের উকিল ও তার শেষ পরিণতি (Kanti360°- Pijush Kanti Official)

ধর্ষকের পক্ষের উকিল


বৃদ্ধ বয়সে মৃগাঙ্ক বাবু আজ বড় অসহায় বোধ করেন।বাড়ি,গাড়ি,টাকাপয়সা সব থেকেও যেনো শান্তি নেই তার জীবনে।এক সময়কার দুঁদে উকিল তিনি।কতো বড় বড় কেস লড়েছেন,নামডাকও মন্দ ছিল না।তার সাথে বদনামটাও ছিল সেটা তার লোভের জন্যই অবশ্য।স্ত্রী গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে।একমাত্র মেয়েটাও চলে গেছে দুনিয়া ছেড়ে,সম্বল বলতে ওই একমাত্র নাতনি মুন্নি।মা হারা মেয়েটা মৃগাঙ্ক বাবুর প্রাণ।সারাদিন কেটে যায় নাতনির সাথে গল্প করে,খেলা করে। তারপর মুন্নি এসে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ে তার দাদুভাইয়ের কাছে।মাথায় হাত বুলিয়ে  পরম মমতায় ঘুম পাড়িয়ে দেন মুন্নিকে তিনি।তখন খুব মনে পড়ে একমাত্র মেয়ে প্রিয়াঙ্কার মুখটা,ছোটবেলায় ঠিক এইভাবেই মৃগাঙ্ক বাবু ঘুম পাড়াতেন মেয়েকে।মাঝে মাঝে মনে হয় প্রিয়াঙ্কার মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেই দায়ী।ওর মা বেঁচে থাকলে হয়তো মেয়েটা আজ সন্তান নিয়ে আনন্দে বাঁচতে পারতো।

বেশ সুখেই ছিলেন আনন্দী দেবী স্বামী,সংসার,সন্তান নিয়ে।একদিন মেয়ের সাথে বসে টিভিতে খবর দেখে চমকে উঠলেন আনন্দী দেবী।স্কুল পড়ুয়া একটা ছোট্ট মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।মনটা ভারি হয়ে গেল খবরটা দেখে,মেয়েটার বাঁচার আশা নেই এমনটাই দেখাচ্ছে টিভিতে।মৃগাঙ্ক বাবু বাড়িতে কথাবার্তা তেমন বলতেন না।আনন্দী দেবী খাবার টেবিলে বসে প্রসঙ্গটা তুলতেই এড়িয়ে গেলেন তিনি।কয়েকদিন পরেই টিভিতে স্বামীর নাম শুনে আনন্দী দেবী আর প্রিয়াঙ্কা হতবাক।তার বাবা কিনা একজন ধর্ষকদের পক্ষের উকিল।যে পশুগুলো একটা তরতাজা প্রাণকে বাঁচতে দেয়নি পশুর মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে উপভোগ করেছে ওই কচি শরীরটা,তারপর রক্তাক্ত নিঃসাড় দেহটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তাদেরকেই শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে চাইছে তার বাবা!এটা ভেবেই প্রিয়াঙ্কা কাঁদতে শুরু করলো।

মৃগাঙ্ক বাবু বাড়িতে ফিরতেই স্ত্রী আনন্দী দেবী স্বামীকে অনেক বোঝালেন।বললেন-"তোমার ঘরেও তো একটা মেয়ে আছে তার সাথে যদি এমন হতো‌ কি করতে?"
মৃগাঙ্ক বাবুর চোখে তখন টাকার নেশা। স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন-"এই কেসটা লড়লে কতো টাকা পাবো জানো?ওই টাকাতে আমার বাঙলো বাড়ি,দামী গাড়ি সব হবে।আর মেয়েটাকে অনেক ধুমধাম করে বিয়ে দেবো।"
আনন্দী দেবী অসহায়ের মতো তাকালেন স্বামীর দিকে।বললেন-"একটা মেয়ের যন্ত্রণার বিচারের পরিবর্তে তুমি নিজের সুখ কিনছ?কিন্তু ও সুখ তুমি ভোগ করতে পারবে না।"
আনন্দী দেবীর কথাটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে আজ।

কয়েকদিনের মধ্যেই সারা পাড়ায় রটে গেছে খবরটা।রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে প্রিয়াঙ্কা শোনে পাড়ার লোক বলছে-"এর বাবাই তো ধর্ষকদের পক্ষের উকিল।ছিঃ ছিঃ।"
প্রিয়াঙ্কার চোখে জল আসে সে যে কখনো চায়নি এমনটা।অথচ প্রায়ই খবরের কাগজে টিভিতে শোনে তার বাবা বলে চলে ওই মেয়েটার দোষের কথা,সমালোচনা করে তার পোশাক নিয়ে। কয়েক মাসের মধ্যে ওরা ওদের নতুন বাঙলো তে চলে গেল।কিন্তু ভীষন একা হয়ে গেছে প্রিয়াঙ্কা।ওকে দেখলে সবাই কেমন ভাবে তাকায় ওরদিকে,অপরাধী মনে হয় ওর নিজেকে।তার বন্ধুবান্ধবদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে সে।সারাদিন একাই কাটায়‌।দুশ্চিন্তায় আর মানসিক কষ্টে আনন্দী দেবী প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

একটা বছর পরেই মৃগাঙ্ক বাবু বিয়ে দিলেন প্রিয়াঙ্কার ধুমধাম করে বড়লোক পাত্রের সাথে।কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই মারা গেলেন আনন্দী দেবী।সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেন মৃগাঙ্ক বাবু।প্রিয়াঙ্কাও আর আসে না এ বাড়িতে,মা নেই আর যেনো ওর কোনো টান নেই এ বাড়ির উপর।মাঝে মাঝে মৃগাঙ্ক বাবু এসে দেখা করে যান মেয়ের সাথে।বিয়ের দু বছর পর মুন্নির জন্ম হয়।আস্তে আস্তে মুন্নি বড় হতে থাকে।এখন মৃগাঙ্ক বাবুর বয়স বাড়ছে তেমন কেস নেন না আর।বাড়িতে থাকলে একাকিত্ব অনুভব করেন,তাই মাঝে মাঝে ঘুরতে যান পাহাড় বা সমুদ্রে।

তখন মুন্নির বয়স সবে দুই।দার্জিলিং বেড়াতে গেছিলেন মৃগাঙ্ক বাবু।হঠাৎ খবর পেলেন প্রিয়াঙ্কা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে।কিন্তু এই আত্মহত্যার কারণ খুঁজে পেলেন না মৃগাঙ্ক বাবু।কখনো তো অভিযোগ করেনি সে শ্বশুর বাড়ির লোকদের নিয়ে।সোজা পৌঁছালেন হাসপাতালে।গিয়ে মেয়ের পোড়া শরীরটা দেখে আঁতকে উঠলেন তিনি।মেয়ের‌ সাথে কথা বলার সুযোগ পেলেন শেষ বারের মতো।জানলেন বিয়ের পর থেকে ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে গেছে তার শ্বশুর বাড়ির লোক তারপর চেষ্টা করেছে তাকে পুড়িয়ে মারার।মৃগাঙ্ক বাবু করুন মুখে বলেছেন-"একবার বাবাকে জানাতে পারলি না মা?"
প্রিয়াঙ্কার শেষ কথাটা এখনো কানে বাজে। মেয়েটা বলেছিল-"কাকে বলবো আমার দুঃখের কথা?যে মানুষটা একটা ছোট্ট মেয়ের ধর্ষণের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেনি সে আমার কষ্ট কখনো বুঝবে না।" সেদিন চোখে জল এসেছিল মৃগাঙ্ক উকিলের।প্রিয়াঙ্কাকে বাঁচানো যায়নি। প্রিয়াঙ্কার বয়ান থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন শাস্তি পেয়েছে আর মৃগাঙ্ক বাবু নাতনিকে নিয়ে চলে এসেছেন নিজের কাছে।

এখন মুন্নির চার বছর বয়স।বাড়িতে লোক বলতে একজন আয়া যে মুন্নির দেখাশোনা করে,দুজন ঠিকে ঝি আর দুজন সিকিউরিটি গার্ড।সবার সাথেই মুন্নির খুব ভালো সম্পর্ক।ছোট্ট মুন্নি সবার আদরের।মাঝে মাঝে দরকার থাকলে মৃগাঙ্ক বাবু নাতনিকে আয়ার কাছে রেখে বেরোন আশেপাশে।তবে ঘন্টায় ঘন্টায় নাতনির খবর নিতে ভোলেন না।সেবার মৃগাঙ্ক বাবু বেরিয়েছিলেন ব্যাঙ্কের কাজে।বাড়িতে বলে গেলেন‌ ফিরতে দেরি হবে।হঠাৎ করে আয়া মাসির ছেলে ফোন করে ডাকলো মাকে তার কিছু টাকার দরকার।আয়া মাসি মুন্নিকে ঘুম পাড়িয়ে বেরলো।বেরোনোর সময় বলে গেল সিকিউরিটি গার্ডকে মুন্নি একা আছে তারা যেনো খেয়াল রাখে তার পারলে একবার দেখে আসতে।মৃগাঙ্ক বাবু কাজ সেরে বাড়িতে ঢোকার মুখে দেখলেন সিকিউরিটি গার্ড দুজন উধাও।বাঙলোর মধ্যে ঢুকে দেখলেন আলমারির তালা ভাঙা সারা ঘরময় জিনিসপত্র ছিটিয়ে।আর দেখলেন একপাশে পড়ে আছে তার আদরের রক্তাক্ত নাতনি,যন্ত্রনায় কুঁকড়ে। নাতনিকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালে।মুন্নির অবস্থা সংকটজনক।

আবার বিচার চলছে সিকিউরিটি গার্ড দুজন ধরা পরেছে।মৃগাঙ্ক বাবু ছলছল চোখে তাকিয়ে দেখলেন ওই দুজন জানোয়ার যাদের জন্য মুন্নির এই অবস্থা তাদের পক্ষেও উকিল দাঁড়িয়েছে।মৃগাঙ্ক বাবুর আজ মনে হচ্ছে ওই ধর্ষকদের মতো ওই উকিলটাও অপরাধী শিক্ষিত হয়েও। বিচার চলছে বিপরীত পক্ষের উকিল চেঁচিয়ে বললেন-"কি হে মৃগাঙ্ক বাবু একদিন তো আপনিও ধর্ষকদের পক্ষের উকিল ছিলেন আজও নিশ্চয়ই আপনার মনে হয় দোষটা আপনার নাতনির কিংবা ওর ছোট পোশাকের তাই না?একই আদালতে দাঁড়িয়ে আপনি একবার চেয়েছিলেন ধর্ষকদের শাস্তি মকুব করতে,আজ চাচ্ছেন আপনার নাতনির ধর্ষণকারীদের শাস্তি দিতে।এমনটা কেনো?"
আর কথা বলতে পারছেন না মৃগাঙ্ক বাবু অপরাধবোধে কষ্টে আজ সব শক্তি তিনি হারিয়েছেন।আজ তিনি বুঝেছেন শুধু ধর্ষকরা নয় ধর্ষকদের পক্ষের লোভী উকিলরাও সমান ভাবে অপরাধী।তারা হতে পারে শিক্ষিত কিন্তু মানসিকতা তো ওই ধর্ষকদের মতোই।

 #ধর্ষকের_‌পক্ষের_উকিল
এই গল্পটি সাম্প্রতিক ঘটনা'র উপড় ভিত্তি করে লিখেছেন-

©শ্রাবন্তী_মিস্ত্রী

ধর্ষকের পক্ষের উকিল ও তার শেষ পরিণতি (Kanti360°- Pijush Kanti Official) ধর্ষকের পক্ষের উকিল ও তার শেষ পরিণতি (Kanti360°- Pijush Kanti Official) Reviewed by Pijush Kanti Sarkar on November 14, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.