আসুন আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে নিজেই নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন?
নিজেই করুন নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স
আমরা প্রায় সময় লক্ষ করে থাকি যে, আমরা যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স করার প্রয়োজন অনুভব করি কিন্তু কি করে নিজে বিআরটিএ তে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হয় সে বিষয়ে না জানার কারণে অনেকেই বিভিন্ন ভাবে দালালের মাধ্যমে প্রকৃত ফি এর চাইতে অনেক বেশি টাকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স করে থাকি।
যা আসিলে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার বা আমার করা ঠিক নয়। তাই আমরা আজকে আলোচনার মাধ্যমে জানার চেস্টা করবো কি করে নিজেই বিআরটিএ তে গিয়ে কোন রকম ঘুষ/দালাল ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স করা যায়।
হ্যা আপনাকেই বলছি আপনি রাস্তায় একটি মোটরবাইক চালান অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই তা কি করে হয়? ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোন যান বাহন চালান আইনত অপরাধ, আপনি মোটরবাইক / মোটর কার চালান আর যেকোন ধরনের যান চালান না কেনো, আপনার একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাঞ্ছনীয়।
এবার আসুন যেনে নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স কত প্রকার?
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত দুই প্রকার বা ধরনের হয়র থাকে (১) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, (২) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া :
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২০ বছর এবং অপেশাদার এর জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।
আপনাকে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে।
কারণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স।
আপনাকে আপনার স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমান ঠিকানা যে কোন ঠিকানা ব্যাবহার করে (প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ) বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভূক্ত আপনার ব্যাবহৃত ঠিকানা আপনাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবে যা দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে। ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। এসময় প্রার্থীকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হবে।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশিস্নষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
১। ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
২। সদ্য তোলা ০৩ কপি স্ট্যাম্প ও ০১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
৩। নির্ধারিত ফী, ক্যাটাগরি-১ = ৩৪৫/-টাকা ও ক্যাটাগরি-২ =৫১৮/-টাকা বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
৪। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
এই সব কিছু সংগ্রহ করার পর
৫। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এখানে ১ ক্যাটাগরি ও ২ ক্যাটাগরি বলতে বোঝানো হয়েছে একই ড্রাইভিং লাইসেন্স এ যদি শুধু এক ধরনের যান চালানোর অনুমতি থাকে সেটা হবে ক্যাটাগরি-১ আর যদি একই লাইসেন্সে দুই ধরনের যান চালানোর অনুমতি থাকে সেটা হবে ক্যাটাগরি-২।
এখন জেনে নেই স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স (প্রকৃত) -এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
এক্ষেত্রেও কাগজ পত্র প্রায় একই রকম তবে নির্ধারিত ফি এর পরিমান সম্পুর্ণ আলাদা।এবং সেই সাথে পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হয়।
১। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
২। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৩। নির্ধারিত ফী (পেশাদার- 1679/-টাকা ও অপেশাদার- ২৫৪২/-টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
৪। ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৫। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৬। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
এই নির্ধারিত ফরম পাওয়া যাবে বিআরটিএ সার্কেল অফিসে, অথাবা (www.brta.gov.bd –তে)।
গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি বিআরটিএ হতে জানিয়ে দেয়া হয়।
কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করা যায়ঃ
(ক) পেশাদারঃ
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদেরকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
লাইসেন্সধারীর বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য লাইসেন্সধারীদেরকে নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হয়। স্মার্ট কার্ড প্রন্টিং-এর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে লাইসেন্সধারীদেরকে এসএমএস এর মাধ্যমে বিআরটিএ হতে জানিয়ে দেয়া হয়।
তবে তার আগে পরীক্ষায় উত্ত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি ( মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। এবং সেই আবেদনের ভিত্তিতেই ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
এবার যেনে নেই
(খ) অপেশাদারঃ
লাইসেন্সধারীদেরকে প্রথমে নির্ধারিত ফি ( মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে একইদিনে লাইসেন্সধারীর বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে লাইসেন্সধারীদেরকে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি বিআরটিএ হতে জানিয়ে দেয়া হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৪। নির্ধারিত ফী জমাদানের রশিদ।
৫। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৬। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।
২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
৪। নির্ধারিত ফী জমাদানের রশিদ।
৫। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
৬। সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।
এই পদ্ধতি অনুসরন করে আপনি বা আপনার পরিচিত কোন ব্যাক্তি খুব সহজেই কোন দালাল চক্র ছাড়াই এবং কোন রকম ঘুষ প্রদান না করেই ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি এবং মেয়াদ উত্তির্ন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করে নিতে পারেন।
আজকের বিষয় আলোচনা যদি আপনার এতটুকু ভালো লেগে থাকে বা আপনি যদি মনে করেন আপনার কোন ধরনের উপকার হয়ে থাকে। তাহলে অনুগ্রহ করে এই পোস্ট টি আপনার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করেবন যাতে করে আরোও অনেকেই বিষয়টি জানতে পারে বা উপকার পেতে পারে।
মনে রাখবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোন ধরনের যান চালানো সপুর্ন অবৈধ এবং আইনত অপরাধ।
আসুন নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন হতে উতসাহ প্রদান করি। ধন্যবাদ-
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি ভাবে করবেন । Kanti360°
Reviewed by গান ও কবিতা ঘর
on
September 24, 2019
Rating:
No comments: